Thursday, April 20, 2017

শক্তিতত্ত্ব ও পূজাপদ্ধতি (Power-worship : Theory & Practice)


2) শক্তিতত্ত্ব ও পূজাপদ্ধতি

“যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা ৷
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ৷৷”
অর্থাৎ জড়, চেতন, সকলের মধ্যে কোথাও গুপ্ত, কোথাও ব্যক্তভাবে অবস্থিতা শক্তি-রূপিণী দেবীকে আমরা বার বার প্রণাম করি ।

হে পাঠক, নবযুগে নবোদ্যমে সনাতনী শক্তি আবার জাগরিতা ! ভগবান শ্ৰীৱামকৃষ্ণদেবের অলৌলিক ত্যাগ, তপস্যা ও নিরন্তর সপ্ৰেমাহ্বানে ইনি প্রবৃদ্ধা হইয়াছেন এবং নরদেব শ্রীবিবেকানন্দের গুরুগতপ্রাণতায় প্রসন্না হইয়া পরমকল্যাণে নিযুক্তা হইয়াছেন । অতএব সমগ্ৰ ভারত এবং কালে সমগ্ৰ পৃথিবীও যে ইঁহার পবিত্ৰ স্পর্শে নবভাবে পূর্ণা হইয়া একদিন কৃতাৰ্থ হইবে, ইহাতে সন্দেহ নাই । কারণ, ব্ৰহ্মসদ্ভাবে ব্ৰহ্মশক্তি - সর্বদা অমোঘ, অবিনাশী, সর্বান্তনিহিত থাকিয়া সর্বদা সকলের নিয়মনকরী । 

শক্তির বিচিত্র প্রভাবেই সর্ষপতুল্য বীজে বিশাল বৃক্ষ, মাংসপিণ্ড মনুষ্যশরীরে জড়জগন্নিয়ামিকা চৈতন্যময়ী বুদ্ধি এবং আকাশাপেক্ষাও তরল, ইন্দ্ৰিয়াতীত মনে সমস্ত বিশ্বসংসার প্রতিষ্ঠিত রহিয়াছে । সাধারণ শক্তির প্রভাবই যখন এমন অদ্ভুত, তখন অন্তর্জগন্নিয়ামিকা আধ্যাত্মিক শক্তির মহিমার কিরূপে ইয়ত্তা হইবে ? কেনই বা না জগৎ আবহমান কাল ধরিয়া উহার পূজায় প্ৰাণপাতে অগ্রসর হইবে ? আবার জগতে নবপ্ৰবোধিতা শক্তির পূজা প্রসারিতা হইবে । আবার ভারত ভগবান শ্ৰীরামকৃষ্ণপ্ৰবোধিত সনাতনী ব্ৰহ্মশক্তির পূজা করিয়া নিজে ধন্য হইবে এবং অপরকে ধন্য করিবে । অতএব, শক্তিতত্ত্ব এবং শক্তিপূজা-সম্বন্ধে দুই চারি কথা বলিবার ইহাই উপযুক্ত কাল ।

শুভ্ৰশির বেদ বলেন - প্ৰাচীনা হইলেও শক্তি নিত্যা নবীনা, গুপ্তভাব হইতে ব্যক্তা হইলেই নবীনা বলিয়া প্রতীয়মানা । নতুবা শ্ৰীরামকৃষ্ণদেব যেমন বলিতেন, “চিকের আড়ালে দেবী সর্বদাই রহিয়াছেন ।” শক্তির হ্রাস নাই, বৃদ্ধি নাই, লোপ তো দূরের কথা । ঘন বা সূক্ষ্ম আবরণের মধ্য দিয়া দেখিয়াই আমরা উহার কখন হ্রাস, কখন বৃদ্ধি, আবার কখন বা একেবারে লোপ কল্পনা করিয়া থাকি মাত্র ।

এক শক্তিই কতবার গুপ্ত হইতে ব্যক্ত এবং ব্যক্ত হইতে গুপ্তভাব প্ৰাপ্ত হইল, কে তাহা বলিতে পারে ? যতবার ব্যক্ত, ততবার নূতন । যতবার গুপ্ত, ততবার লুপ্ত বলিয়া অনুভূত হইল । কালে কালে এই খেলা চলিয়াছে । দেশ, মহাদেশ, পৃথিবী, অখিল জগৎ লইয়া - জাতি, সমাজ, প্রত্যেক পরিবার এবং ব্যক্তিকে লইয়া এই খেলা নিত্য চলিয়াছে । কত গ্ৰহ চূর্ণিত এবং কত গ্ৰহ পুনর্গঠিত হইল, কত দেশ পর্বতায়িত এবং কতই বা সমুদ্রকবলিত হইল, কে নির্ণয়ে সক্ষম ? এক গ্ৰহ বা পৃথিবভ্যন্তরস্থ এক দেশের কতবারই বা এই দশা হইল, তাহাই বা কে বলে ? তুষারাবৃত হিমালয়শৃঙ্গে সমুদ্র গর্জনের এবং সমুদ্রগর্ভে দেশ-জনপদের অস্তিত্বের ইতিহাস বর্তমান ৷ প্ৰসিদ্ধিই আছে, ‘শতবর্ষে জনপদ, আবার শতবর্ষে অরণ্য ।”

এইরূপে কত জাতি ও সমাজ উন্নত, অবনত এবং পুনরায় উত্থিত হইতেছে, তাহা কে বলিবে ? আবার শৈশব, যৌবন এবং বার্ধক্যে ব্যক্তিগত শক্তির তারতম্য কেই বা না প্রত্যক্ষ করিয়াছে ? পুনর্জন্মে সেই শক্তির পুনর্বিকাশ, ভারতের কোন যোগী ঋষিই না অনুভব করিয়াছেন ? অতএব ভাবিয়া দেখিলে - প্ৰফুল্ল কমলোপরি অধিষ্ঠিতা, লঘুকায়া অপূৰ্ব সুন্দরীর পুনঃ পুনঃ গজগ্রাস এবং গজ-উদ্‌গার করিবার কথা আর কবি-কল্পনা বলিয়াই মনে হয় না । অথবা দেবর্ষি নারদদৃষ্ট ভাগবতী মায়ার সূচী ছিদ্রে বারংবার হস্তী প্ৰবিষ্ট এবং নিৰ্গত করাইবার কথাতেও আর সন্দিহান হওয়া যায় না । ভগবান শ্ৰীরামকৃষ্ণদেব একদিন জগজ্জননী, মহামায়ার স্বরূপতত্ত্ব অবগত হইতে অভিলাষী হইয়া দেখিয়াছিলেন - অনুপমা সুন্দরী নারী সর্বাঙ্গসুন্দর পুত্র প্রসবে এবং লালনপালনে অশেস আয়াস স্বীকার করিয়া, আবার তাহাকে কিছুকাল পরে সহর্ষে গ্রাস করিলেন । শক্তিতত্ত্ব আলোচনা করিলে, শক্তি যে একাধারে প্রসব ও প্ৰলয়রূপ বিপরীত গুণধারিণী, এ কথাই পরম সত্য বলিয়া অনুভূত হয় । আধুনিক দার্শনিকও সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছেন, শক্তির বিনাশ বা পরিমাণের হ্রাস নাই । গুপ্ত ও ব্যক্ত ভাব হয় মাত্র ।

ভাব রাজ্যেও তাহাই । ভাব রাজ্যে বা সূক্ষ্ম মনোরাজ্যেও শক্তির এই খেলা বর্তমান । এক জাতি, সমাজ বা ব্যক্তি-উপলব্ধ-ব্যবহারিক ও পারমার্থিক ভাব কালে অঙ্কুরিত, বর্ধিত, পরিণত এবং লুপ্ত হইয়া আবার সেই ভাব-তরঙ্গ অপর জাতি বা সমাজ বা ব্যক্তির ভিতর প্রবিষ্ট ও প্রকাশিত হইয়া নূতন বলিয়া উপলব্ধ হয় । মহাশক্তির বিচিত্র লীলায় ঐ দ্বিতীয় জাতি উহার পুরাতনত্ব আদৌ অনুভব না করিয়া ভাবে, এ ভাব জগতে আর কখনও উদিত হয় নাই এবং মদগর্বে স্ফীত হইয়া জটিল জীবন-সমস্যার এক অপূর্ব সরল সমাধান তৎকর্তৃক আবিষ্কৃত, এই কথা প্রচার করে ।

আধুনিক ইওরোপ ও আমেরিকাই ইহার দৃষ্টান্তস্থল । প্রাচীন ভারত, মিসর, গ্রীস ও অন্যান্য দেশের সামাজিক, নৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং অপরাপর ভাবতরঙ্গ এখন ঐ সকল দেশে কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত এবং পুষ্ট হইয়া সমুত্থিত হওয়ায়, ঐ সমস্ত দেশবাসীর মদগৰ্ব প্রত্যক্ষ । পাশ্চাত্ত্য দার্শনিক, তুমি ক্ৰমবিকাশ, স্ত্রী-নিৰ্বাচন, সন্তানানুগত পিতৃগুণবাদ ইত্যাদি লইয়া ‘জীবন-শঙ্কার সরল সমাধান আবিষ্কৃত’ বলিয়া সমগ্র জগৎকে আহবান করিতেছ, কিন্তু বৃথা গর্ব । ভাবতরঙ্গ আবার স্থানান্তরিত হইবে - আলোকের পর অন্ধকার এবং জীবনের পর মৃত্যু আবার আসিয়া উপস্থিত হইবে । জীবন-শঙ্কার একটা জাতিগত সমাধান দূরপরাহতই থাকিবে । তবে ব্যক্তিগত সমাধান ? আবহমান কাল ধরিয়া যাহা হইয়াছে - ‘ঘুড়ি লক্ষে দুটা একটাই কাটিয়াছে’ ও কাটিবে ।

ইওরোপ, তুমি ক্ষাত্ৰশক্তি এবং বৈশ্যশক্তির উপাসনায় হৃদয়ের শোণিত বিন্দু বিন্দু দান করিয়াছ । সেই কঠোর তপস্যাই তোমায় উন্নতিশির করিয়াছে । আমেরিকা, তুমি ঐ দুই শক্তির সহিত আবার শূদ্ৰশক্তির আরাধনে তৎপর, তজ্জন্যই তোমার এত শীঘ্ৰ জাতীয় উন্নতি । কিন্তু আবার তোমরা মহাশক্তির আরাধনায় অবহেলা করিবে এবং কালে ভুলিয়া যাইবে । আবার সেই ‘সহস্রপরমা শতমূলা শতাঙ্কুরা ।’ দুর্গাদেবী অন্যের আরাধনায় প্ৰসন্না হইয়া অন্যত্র উদিতা হইবেন । ইহাই নিয়ম ।

গুপ্ত হইতে ব্যক্ত এবং ব্যক্ত হইতে গুপ্ত - শক্তির এই দুই ভাবের খেলা জগতে নিরন্তর সর্বত্র বিরাজিত । যে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতিতে শক্তির প্রথমোক্তভাবের খেলা হইতেছে, তাহাকেই আমরা জীবন্ত, উন্নতিশীল এবং ভাগ্যবান বলিয়া বোধ করিতেছি এবং যাহাতে শেষোক্ত ভাবের খেলা, তাহতেই বাৰ্ধক্য, শ্ৰীহীনতা, অবনতি এবং মৃত্যুর ছায়া উপলব্ধি করিতেছি ।

আবার, বহু কাল গুপ্তভাবে অবস্থিত শক্তির বিকাশ যে শরীর-মন আশ্রয়ে হয়, বা ব্যক্ত শক্তির কার্যক্রম যাঁহার দ্বারা যথাযথ গঠিত হয়, শ্রদ্ধাভক্তিপ্রণোদিত হইয়া তাঁহাকে আমরা কতই না উচ্চাসন প্রদান করিতে বাধ্য হই ! জড়রাজ্যে তিনি - আবিষ্কারক, মনোরাজ্যে - দার্শনিক এবং ধর্মরাজ্যে - মুক্তস্বভাব ঋষি অথবা শুদ্ধসত্ত্ববিগ্রহধারী অবতার ।

পঞ্চেন্দ্ৰিয়ের দ্বারা যাহা কিছু স্পর্শ করিতেছি, মনের দ্বারা যাহা কিছু চিন্তা বা কল্পনা দ্বারা যাহা কিছু অনুমান ও গঠন করিতেছি, সকলই শক্তিসহায়ে, সকলই শক্তিরাজ্যের অধিকারভুক্ত । বেদমুখে দেবী বলিতেছেন -
“ময়া সোহান্নমত্তি যে বিপশ্যতি যঃ প্রাণিতি যঃ ঈং শৃণোত্যুক্তম ৷
অমন্তবো মাং ত উপক্ষিয়ন্তি  শ্রুধি শ্ৰত শ্ৰদ্ধিবং তে বদামি ॥
* * *

অহং রুদ্রায় ধনুরাতনোমি  ব্ৰহ্মদ্বিষে শরবে হন্তবা উ ৷ 
অহং জনায় সমদং কৃণোম্যহং দ্যাবাপৃথিবী আবিবেশ ॥” - [ঋক্‌ - দেবীসুক্ত]
অর্থাৎ, আমার দ্বারাই লোকে জীবিত রহিয়াছে, অন্নগ্রহণ এবং শ্রবণাদি করিতেছে । আমাকে যে অবহেলা করে, সে বিনষ্ট হয় । তুমি শ্ৰদ্ধাবান, এইজন্য তোমাকে এসকল বলিতেছি । ব্ৰহ্মশক্তির হিংসক অসুরদিগের বধের নিমিত্ত ধনুর্ধারী রূদ্রের বাহুতে আমিই শক্তিরূপে অবস্থিতা ছিলাম । আমিই লোকরক্ষার জন্য যুদ্ধকার্যে নিযুক্তা হই । আমিই আকাশ এবং পৃথিবীর মধ্যে প্রবিষ্টা হইয়া রহিয়াছি ।

শক্তিরাজ্যের পূর্বোক্ত অদ্ভুত বিস্তৃতি একবার যিনি উপলব্ধি করিয়াছেন, তিনি বুঝিয়াছেন যে, শক্তিপূজাতেই জগৎ চিরকাল ব্যাপৃত । শক্তি-আরাধনা ভিন্ন সংসারে অন্য কোনরূপ উপাসনাই কখন হয় নাই বা হইবে না । জড়, চেতন সকলেই যুগযুগান্তর ধরিয়া আজীবন শক্তি-আরাধনায় ব্যস্ত থাকিয়াও পূজা সাঙ্গ করিতে পারিতেছে না । পারিবে কি কোন কালে ? যদি পারে, সেও শক্তি সহায়ে -
“সৈষা প্ৰসন্না বরদা নৃণাং ভবতি মুক্তয়ে ৷”
প্ৰসিদ্ধি আছে, শক্তিপূজার ফল হাতে হাতে পাওয়া যায়, বিশেষতঃ কলিতে, অন্য দেবতা সব নিদ্ৰিত; শক্তিপূজা-সম্বন্ধীয় তন্ত্রসমূহ ভিন্ন অন্য শাস্ত্রসমূহের নির্বিষ ভুজগের ন্যায় বৃথাস্ফালন । কথাটা সম্পূর্ণ না হউক, কতক সত্য বটে । কারণ, প্ৰত্যক্ষ দেখিতেছি মানুষ জড় বা মনোরাজ্যে যাহা কিছু অধিকার লাভ করিয়াছে, সব শক্তি-আরাধনার ফলে । জড়শক্তি বলিয়া যাহা সাধারণ মানবের প্রত্যক্ষগোচর, তদারাধনার ফলেই তাহার শারীর-বিজ্ঞান, ভূত-বিজ্ঞান, রোগ-শান্তি, মহামারীর প্রতিবিধান, আহারসংস্থান, ধনাগমের বিবিধ উপায়, যুদ্ধবিগ্রহের উপযোগী অস্ত্রশস্ত্ৰ প্ৰভৃতি করতলগত; তেমনি, মানসিক শক্তি বলিয়া যাহা পরিচিত, তদুপাসনায় মানবের মনোবিজ্ঞান, কবিত্ব, সংযম, বিবাহ-বিধান, সভ্যতা, নীতি, সমাজগঠন, রাজনীতি প্ৰভৃতি; এবং আধ্যাত্মিক শক্তির উদ্বোধনে ব্ৰহ্মচৰ্য, সত্য, সন্তোষ, শামদম্যাদি সাধনসম্পত্তি এবং পরিশেষে সর্ববাধাবিনির্মুক্তিরূপ পরম পুরুষাৰ্থও তাহার আয়ত্তীভূত । অবশ্য ঐ সকল বহুলোকের বহুকাল ধরিয়া বহুভাবে শক্তি-উপাসনার ফলে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে । কিন্তু মানুষ সৰ্বকালে যতটুকু শ্রদ্ধাভক্তির সহিত যে-কোনও শক্তির যে পরিমাণে উপাসনা করিয়াছে, সেই পরিমাণে ফলও হাতে হাতে পাইয়াছে । একালের উপাসকদেরও এ কথা প্ৰত্যক্ষানুভূত ।

তবে অঙ্গহীন হইলে বা বিধি ও শ্রদ্ধা-বিরহিত হইলে পূজার সম্পূৰ্ণ ফল লাভ অসম্ভব এবং সময়ে সময়ে বিপরীত ফলও ঘটিয়া থাকে । যে পূজায় যে যে উপকরণ আবশ্যক, তাহা আয়াসসাধ্য হইলেও একত্র করিতে হইবে, যে কারণসমূহের সংযোগে যে বিশেষ ফলের উৎপত্তি, সে সমূহের একত্র সংযোগ চাই । এ কথাটি যেমন বড়ই সোজা, তেমনি বার বার মানুষ ভুলিয়া যায় । এদেশে আমরা একথাটি আজকাল কতই না ভুলিয়াছি । ফলও তদ্রুপ পাইতেছি । সমগ্ৰ দেশ আজ শক্তিপূজার আড়ম্বরে ব্যস্ত থাকিয়াও নির্বীৰ্য, ধর্মহীন, বিদ্যাহীন, ধনহীন, অন্নহীন, শ্ৰীহীন । দোষ - পূজাবিধির ব্যতিক্রম । রসায়ন-বিজ্ঞানে বুৎপত্তিলাভ করিবে বলিয়া যদি কেহ ত্রিসন্ধ্যা স্নান, হবিষ্যান্ন-ভোজন এবং নির্জনে বীজমন্ত্র জপ করিতে থাকে, তাহার ফল-প্রত্যাশা কোথায় ? তাহার ইষ্টশক্তি-উপাসনা অঙ্গহীন । মহামারীর প্রতিবিধান-উদ্দেশ্যে যদি কেহ বাহ্যশোচের বিধানসকল সম্পূর্ণ অবহেলা করিয়া, খাদ্য-পানীয়ের বিচার না রাখিয়া কেবলমাত্র কয়েক ঘণ্টা উচ্চরোলে হরি-সঙ্কীর্তন করে, তবে তাহার চেষ্টা বাতুলতা ভিন্ন আর কি বলা যাইবে ? তাহার ইষ্টপুজার উপকরণসমূহের অত্যন্তাভাব । দুর্ভিক্ষের করাল বদন হইতে দেশোদ্ধার করিবে বলিয়া যদি কেহ কেবলমাত্র রক্ষাকালীয় পূজা দিয়া নিশ্চিন্ত থাকে, নূতন উপায়ে অৰ্থাগম, অন্নবৃদ্ধি এবং অন্যান্য উপোযোগী উপায়সকলের প্রতি লক্ষ্য ও চিন্তা না রাখে, তাহার আরাধনাও অঙ্গহীন বই আর কি বলা যাইবে ? স্বদেশের কল্যাণ-সাধনের জন্য যিনি অহরহ বক্তৃতা দানেই ব্যস্ত, কিন্তু একবিন্দু স্বাৰ্থত্যাগে সর্বদাই পশ্চাৎপদ, তাঁহার উপাসনাই বা কি ফল প্ৰদান করিবে ? কথায় বলে, ‘যে বিবাহের যে মন্ত্র' তাহার উচ্চারণ চাই । এইরূপ শ্রদ্ধাহীন, বিধিহীন, মন্ত্রহীন, অদক্ষিণ পুজা করিয়া বলিব, ‘পুজার ফল তো পাইলাম না ।’ হায় মানব তোমার সহজ বুদ্ধির কি একান্ত অভাবই হইয়াছে ! শাস্ত্ৰ তো তোমায় বার বার বলিতেছেন, কোন কাৰ্য সুসিদ্ধ হইতে পাঁচটি কারণের প্রয়োজন -
“অধিষ্ঠানং তথা কর্তা করণঞ্চ পৃথগ্বিধমৃ ৷
বিবিধাশ্চ পৃথক্‌ চেষ্টা দৈবঞ্চৈবাত্র পঞ্চম্‌ ৷৷”- [গীতা]
যথা - উপযুক্ত দেশ, উদ্যমশীল কর্তা, সম্পূর্ণ ইন্দ্ৰিয়গ্রাম, বার বার উদ্যম এবং দৈব । সহজ জ্ঞানেও তো বার বার উপলব্ধি করিতেছে যে, এক হস্তে দৈব এবং অপর হস্তে পুরুষকারকে দৃঢ়রূপে ধারণ করিলে তবেই গন্তব্য পথে অগ্রসর হওয়া যায় । নতুবা পুরুষকারসহায়ে চেষ্টা ও নির্ভরশীলতা এতদুভয় তোমায় ভগবান কেন দিয়াছেন ? একবার সোজাসুজি ভাবিয়া দেখ দেখি, ভারতের পূর্ব পূর্ব ঋষিগণ যে মনোবিজ্ঞান, শারীর-বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা, রাজনীতি প্রভৃতিতে পারদর্শিতালাভ করিয়াছেন, তাহা কি কেবল মন্ত্র জপ-প্ৰভাবে বা চেষ্টারহিত হইয়া কেবলমাত্র দৈবের উপর নির্ভর করিয়া ? ভারতের তান্ত্রিক অবধূতেরা যে সকল ধাতুঘটিত ঔষধ এবং বিবিধ বিষ-প্রয়োগে বিবিধ রোগশান্তি উপায় আবিষ্কার করিয়াছিলেন, তাহাতে কতই না নিৰ্ভীক উদ্যম এবং পরীক্ষার পরিচয় পাওয়া যায় ! কত সাধকের অনুরাগ-ভক্তিপূত হৃদয়ের শক্তিপূজার ফলেই না ঐ সকলের এক একটি আবিস্কৃত হইয়াছে ! এখন বিষয়বিশেষের প্রতি অনুরাগ ভক্তিতে কেহ হৃদয়ের শোণিত-বিন্দু শুষ্ক করিতেছে দেখিলে তুমি চক্ষু নিমীলন কর, বলিদানের বা স্বার্থত্যাগের নাম শুনিলে একেবারে হতজ্ঞান হও । কিন্তু ঐ শুন, ভারতের ঋষি কার্যে দেখাইয়া চিরকাল ঘোষণা করিতেছেন - শ্রদ্ধা ও ভক্তির সহিত ধীরভাবে যথাযথ উপায় অবলম্বন কর, সকল কষ্ট সহ্য করিয়া বিন্দু বিন্দু হৃদয়ের শোণিতপাত পর্যন্ত স্বীকার করিয়া শক্তির উদ্বোধন এবং তৰ্পণ কর, আপনার প্রিয় যাহা কিছু এবং অতি প্রিয় দেহ মন পর্যন্ত ইষ্ট-লাভোদ্দেশ্যে দেবীর সম্মুখে বলিদান দাও, দেখিবে নবজীবনের সহিত যে উদ্দেশ্যে তুমি পূজা করিতেছ, তাহা সিদ্ধ হইবে এবং তোমার একাঙ্গী ভক্তিপূত সাধনায় তোমার কুল, জাতি ও দেশের মহাকল্যাণ সাধিত হইবে; আপনি ধন্য হইয়া তুমি অপর সাধারণকেও ধন্য করিবে ।

বলিদান বা সম্পূর্ণ স্বাৰ্থত্যাগ ভিন্ন শক্তিপূজা অসম্পূর্ণ, ফলও তদ্রূপ । ছাগ-মহিষ বলি তো অনুকল্পমাত্র । হৃদয়ের শোণিতদান, যে উদ্দেশ্যে পূজা সে উদ্দেশ্যে আপনার সমগ্র শরীর মন সম্পূর্ণ উৎসর্গ না করিলে কোন প্রকার শক্তি-পূজাতেই ফলসিদ্ধি অসম্ভব । বেদ বলেন, “ত্যাগেনৈকে অমৃতত্বমানশুঃ” - ত্যাগই আত্মজ্ঞানলাভ করিয়া অমর হইবার একমাত্র উপায় । কেবল আত্মজ্ঞান কেন, স্বার্থসুখ ত্যাগ না করিলে জগতে কোন মহং বিষয়ই লাভ হয় না এবং ঐ ত্যাগই শক্তিপূজাপদ্ধতির বলি এবং হোমের একমাত্র লক্ষ্য । সর্বত্যাগে অমরত্ব-লাভ, বিদ্যার জন্য ত্যাগে বিদ্যালাভ, ধন জন্য ত্যাগে ধন লাভ, প্রভুত্বের জন্য ত্যাগে প্ৰভুত্বলাভ, এইরূপ অপরাপর বিষয়েও ত্যাগ বা বলি-মাহাত্ম্য নিত্য-প্ৰত্যক্ষ । ঐ সকল বিষয় উপার্জন করিবার উপায় - ত্যাগ এবং রক্ষা করিবার উপায়ও - ত্যাগ, ইহা নিত্য-প্ৰত্যক্ষ ।

যে কোন উদ্দেশ্যেই হউক, শক্তিপূজায় সিদ্ধিলাভ করিতে হইলে বৃথা শক্তিক্ষয় নিবারণ করতে হইবে, সর্বশক্তির আকর অন্তরস্থ আত্মার সহিত সংযুক্ত হইয়া তাহা হইতে শক্তি-অবতরণের পথ পরিষ্কার রাখিতে হইবে এবং পরে সম্যক্‌ শ্রদ্ধার সহিত আবাহন, পূজা এবং আত্মবলিদান করিয়া মহাশক্তির প্রসন্নতা লাভ করিতে হইবে । তবেই দেবী বরদা হইয়া সাধকের প্রাণমনে অভিনব অপূর্ব বলের সঞ্চার করিয়া ঈপ্সিত অর্থে সম্পূর্ণরূপে নিয়োগ করবেন এবং উহাতেই ফলঃসিদ্ধি করতলগত হইবে । করিবার যাহইা কিছু তিনিই করিবেন, সাধকের মনপ্রাণ কেবল নিমিত্তমাত্র হইবে ।

অতএব বিঘ্নোৎসারণ, ভূতবলি, ভূতশুদ্ধি, ন্যাস, প্রাণায়াম প্রভৃতি পূজার পূর্বে করণীয় বিষয়গুলির উদ্দেশ্যই সাধকের বৃথা শক্তিক্ষয়-নিবারণ । যে উপায়েই হউক বৃথা শক্তিক্ষয় নিবারিত হইলেই তুমি উদ্দিষ্ট বিষয়লাভের প্রথম সোপানে আরোহণ করিলে; অন্তর্নিহিত পরমাত্মার ধ্যানে উদ্দিষ্ট বিষয়লাভের জন্য যে বিশেষ শক্তির প্রয়োজন, তাহা তোমাতে উদ্বোধিত হইল; পূজা ও স্বাৰ্থত্যাগে সেই সঞ্চিত, ঘনীভূত ও মূর্তিপরিগ্রহ করিয়া প্রকাশিত হইল; এবং পরিশেষে সেই নবশক্তির নিয়োগে অভীষ্ট ফল করতলগত হইল । সর্বদেশে সর্বকালে সর্বফলসিদ্ধির সম্বন্ধেই এই নিয়ম প্রবর্তিত । শক্তিক্ষয়-নিবারণ আত্মনিহিত মহাশক্তির ধ্যান এবং আত্মবলিদান । শঙ্খ, ঘণ্টা, ধূপ, দীপাদির আড়ম্বর থাকুক আর নাই থাকুক, সর্বপ্রকার শক্তি সাধকের অন্তরেই নিহিত রহিয়াছে — এ কথা জানুক আর নাই জানুক এবং শক্তিবিশেষের আপনাতে প্ৰকাশিত করিবার পূর্বোক্ত ক্রমোপায় জ্ঞাত বা অজ্ঞাত থাকুক, তথাপি অভীষ্ট বিষয়ের প্রতি তীব্র অনুরাগ ও ধ্যানই যে একমাত্র সর্বকালে সর্বসাধককে পূর্বোক্ত ক্রমের ভিতর দিয়া ফলসিদ্ধি প্ৰদান করিয়াছে, একথা একটু চিন্তা করিলেই বুঝিতেই পারা যায় ।

পাশ্চাত্ত্য দার্শনিকগণের অনেকেই শক্তিকে জড় বলিয়া থাকেন । জড়-পরমাণুপুঞ্জে জড়শক্তির খেলা ভিন্ন আর কিছুই তাঁহাদের চক্ষুগোচর হয় না । বিচিত্র বহির্জগৎ এবং এবং তদপেক্ষা সমধিক বিস্ময়কর মানবের অন্তর্জগৎও পূৰ্বোক্ত জড় পিতা-মাতার জড়লীলা প্রসূত জড়সন্তান, এ কথাই তাঁহারা বলিয়া থাকেন । মন বল, বুদ্ধি বল, আত্মা বল, সকলই ঐ রূপে উৎপন্ন । আর একশ্রেণী বলেন, জড় এবং চৈতন্যভেদে শক্তি দুই প্রকার । এই দ্বিবিধ শক্তি-খেলাতেই উভয় জগৎ প্ৰসূত । সূক্ষ্মা চৈতন্যশক্তি স্থুলা জড় ভগিনীকে সর্বদাই আত্মবশে রাখিয়া নিয়ন্ত্রন করিতেছেন ।

পাশ্চাত্ত্যের বিরল দুই-চারি ব্যক্তির শক্তিসম্বন্ধীয় জ্ঞানই ভারতের ঋষিদের জ্ঞানের সমীপবর্তী হইয়াছে । তাহাও অনুমান-সহায়ে; ঋষিদের ন্যায় অনুভূতির ফলে নহে । নতুবা ইওরোপ ও আমেরিকা অল্প দিন মাত্র চার্বাক-মত হইতে কিঞ্চিৎ অগ্রসর হইয়াছে । যুদ্ধ-বিগ্ৰহে, ধনাগম কৌশলে, বহু ব্যক্তির একত্র সংস্থানে ও একোদ্দেশ্যে নিয়ন্ত্রনে, ভৌতিক শক্তির উপর আধিপত্য-বিস্তারে, বৈশ্য এবং এতকাল ঘৃণ্য বলিয়া পরিগণিত শূদ্রের অন্তর্নিহিত শক্তির অপূর্ব বিকাশে, শিক্ষার স্থল হইলেও মানসিক ও আধ্যাত্মিক রাজ্যের উচ্চাঙ্গের শক্তিবিকাশে উক্ত উভয় দেশের আধিপত্য এখনও প্ৰায় নাই বললেও অত্যুক্তি হয় না । সেখানে ভারতের ঋষির “যা নিশা সর্বভূতানাং তস্যাং জাগতি সংযমী” - বিষয়াসক্ত ব্যক্তির যেখানে অন্ধকার, সংযমীর সেখানেই আলোক-বোধ – সেই পুরাতন কথা এখনও সত্য । ভারতের ঋষিদেরই সেখানে এখনও পূৰ্বাধিপত্য অক্ষুণ্ণ । তাই ভারতের বেদ-বেদান্তের গম্ভীর ধ্বনিতে এখনও পাশ্চাত্ত্য জগৎ মোহিত, স্তব্ধ ।

শক্তি জড়স্বরূপা, এ কথা নূতন নহে । বহু সহস্ৰ বৎসর পূর্বে ভারতের কপিলাদি ঋষিগণ একথা প্রচার করিয়াছেন । কিন্তু তাঁহাদের জড়বাদে এবং আধুনিক পাশ্চাত্ত্য দার্শনিকগণের জড়বাদে অনেক প্ৰভেদ বিদ্যমান । যে শক্তি কার্যাকাৰ্যবিচারক্ষম মানববুদ্ধি প্রসব করিয়াছেন, তিনি যে তদপেক্ষা অধম, এ কথা ঋষিদের স্বপ্নেরও অগোচর । কাৰ্য কি কারণাপেক্ষা কখনও গুরু হইতে পারে ? যাহা কারণে বৰ্তমান, তাহাই কার্যে বর্তমান থাকে ও প্রকাশ পায় – এ কথা ঋষিগণ কেন, সর্ববাদিসম্মত ।

ভারতের ঋষি শক্তির স্বাধীন কাৰ্যকারিতার অভাব স্বীকার করলেও চৈতন্যময় পুরুষের সহিত নিত্যসংযোগে তাঁহাকে নিত্যচৈতন্যময়ী দেখিয়াছেন । তাঁহারা বলেন, কল্পনা সহায়ে পৃথক করা ভিন্ন শক্তি ও শক্তিমানকে বাস্তব পৃথক্‌-করা কি কখন সম্ভবে ? অগ্নি ও অগ্নির দাহিকাশক্তিকে কেহ কখনও পৃথক করিয়াছে বা দেখিয়াছে কি ? বহুর ভিতর একের অনুসন্ধানে প্ৰবৃত্ত হইয়া ভারতের ঋষি দ্বৈতাদ্বৈতবর্জিত পরম ধামে উপনীত হইয়াছিলেন । বাহ্য ও আন্তরজগৎ একই শক্তিপ্ৰসূত বলিয়া অনুভব করিয়া পরিশেষে সেই শক্তিকেও শক্তিমানের সহিত নিত্যযুক্ত দেখিয়াছিলেন; সেইজন্যই তাঁহারা বলিয়াছিলেন -
“নিত্যৈব সা জগন্মূর্তিস্তয়া সর্বমিদং ততম্‌”[চণ্ডী]
“মম যোনিরপ্‌ স্বস্তঃ সমুদ্রে" - [দেবীসূক্ত]
অর্থাৎ, দেবী নিত্যস্বরূপা, জগৎই তাঁহার মূৰ্তি, তিনি অখিল ব্ৰহ্মাণ্ড ব্যাপিয়া রহিয়াছেন । যাহা হইতে জীব, জগৎ প্রভৃতি সমস্ত নিৰ্গত হইতেছে, সকলের উৎপত্তির কারণস্বরূপিণী আমিই তাহা – পরমব্রহ্মে নিত্য বিদ্যমান । সেইজন্যই দেবগণ শক্তির স্তব করিতে প্ৰবৃত্ত হইয়া বলিয়াছিলেন -
“যা দেবী সর্বভুতেষু চেতনেত্যভিধীয়তে ৷
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ॥”
অর্থাৎ, যিনি সর্বভূতে চেতনা হইয়া রহিয়াছেন, তাঁহার পদে বার বার প্রণাম ।

চৈতন্যের সহিত শক্তির নিত্য মিলন সর্বত্র প্রত্যক্ষ করিয়াই বিশেষ বিশেষ শক্তিশালী পদার্থে এবং সমগ্র জগতে ভারতের ঋষিগণ শব-শিবার আরাধনা করিয়াছিলেন । অভ্ৰভেদী পর্বতমালা, সাগরবাহিনী নদনদী, ঊষার রক্তিম ছটা, সন্ধ্যার তিমিরাবগুণ্ঠন - সকলই তাঁহাদেৱ নিকট সেই অনন্ত ব্ৰহ্মাণ্ডপ্ৰসবিনী দেবীর প্রতীকস্বরূপ হইয়া তাঁহার সৌম্যাৎসৌম্যতরা মূর্তি প্ৰকাশ করিত । অমানিশার সূচীভেদ্য অন্ধকার, মৃত্যুর নিষ্ঠুর ছবি, শ্মশানের কঠোর উদাসীনতা, কালের সংহার-ছায়া - সকলই আবার সেই করালবদনার ভিতর কোমল-কঠোর ভাবের এককালীন একত্র সমাবেশ নয়নগোচর করাইয়া তাঁহাদিগকে মোহিত করিত । দেবাসুরের নিত্যসংগ্রামস্থল মনুষ্যমনে আবার দেবীর বিশেষ প্ৰকাশ উপলব্ধি করিয়া তাঁহারা বিশেষ আরাধনা বিধান করিয়াছিলেন । পথপ্রদর্শক গুরুর ভিতর, জগদ্বিমোহিনী স্ত্রীমূর্তির ভিতর, বিদ্যা, ক্ষমা, শান্তি, মোহনিদ্রা, ভ্রান্তি প্রভৃতি সাত্ত্বিক এবং তামসিক গুণের ভিতর, সংসারে বিশেষ-গুণশালী প্রত্যেক বস্তু ও ব্যক্তির ভিতর সেই অদ্বিতীয়া বরাভয়করা মুণ্ডমালিনী দেবীর আবির্ভাব-দর্শনে এবং শ্রদ্ধার সহিত আরাধনে তাঁহারা আপনারা কৃতাৰ্থ হইয়া মানবকে সেই পথে চলিয়া ধন্য হইতে শিক্ষা দিয়াছিলেন ।

কোন্‌ কোন্‌ স্থানে শক্তির কি কি বিশেষ প্রকাশ এবং কাহারই বা কিভাবে পূজা বিধান, সে সমস্ত অনেক কথা, অতঃপর আমরা তাহারই আলোচনায় প্রবৃত্ত হুইব । এখন উপসংহারে কেবল ইহাই বলি যে - ভারতের কুলদেবী “দুঃস্বপ্ননাশিনী’ শিবানীর উপাসনায় পূর্ণভাবে আত্মবলিদানের জ্বলন্ত মহিমা যদি দেখিতে, অনুভব করিতে ইচ্ছা থাকে তবে এস, হে পাঠক, একবার নিমীলিতনেত্রে ধ্যানসহায়ে সেই দক্ষিণেশ্বরের পঞ্চবটীতলে সেই কুটীরনিবাসী শক্তিসেবায় আত্মহারা দেবমানব প্রেমিকের পদপ্রান্তে – যাঁহার নিকটে জ্বলন্ত দীক্ষালাভেই শ্ৰীবিবেকানন্দ আজ সুদূর ইওরোপে ও মার্কিনে চিরপদদলিত হিন্দুর ধর্মধ্বজা সগৌরবে উড্ডীন করিয়াছেন – তীর্থাস্পদ তাঁহারই পদপ্রান্তে এস ক্ষণেকের জন্য দণ্ডায়মান হই ।


_________________________________________
Scanned Copy Sources :

1) "Gitatattwa O Bharote Shaktipuja" by Swami Saradananda, November 1959. Published by Bholanath Das, Saptarshi, 13 Bankim Chatterjee Street, Kolkata-700073. Printed by Printer’s Corner, 45/A Raja Deenendra Street, Kolkata-700009.

2) "Bharote Shaktipuja" by Swami Saradananda, 1923. Published by Swami Bishweshwarananda, Udbodhan Office, Kolkata. Printed by Sri Sureshchandra Majumdar, Sri Gouranga Press, 71/1 Mirzapur Street, Kolkata-732123.

3) "Bharote Shaktipuja" by Swami Saradananda, 1928. Published by Brahmochari Ganendranath, Udbodhan Office, 1 Mukherjee Lane, Kolkata. Printed by Sri Santakumar Chatterjee, Bani Press, 33/A Madan Mitra Lane, Kolkata.


Disclaimer:
This is a personal, non-commercial, research-oriented effort of a novice religious wanderer.
এটি আধ্যাত্মিক পথের এক অর্বাচীন পথিকের ব্যক্তিগত, অবাণিজ্যিক, গবেষণা-ধর্মী প্রয়াস মাত্র ।

[Digitised by running Google OCR on scanned PDFs and then by editing/typing mostly in MS-Word/Notepad using Unicode Bengali "Siyam Rupali" font and Avro Phonetic Keyboard for transliteration. Uploaded by rk]

<Previous--Contents--Next>

No comments:

Post a Comment